,

মুখে লিখে দীপ্তি ছড়ালেন উজ্জ্বল

জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বল

রংপুর ব্যুরো: শরীরের বাঁকে বাঁকে তার বহুমাত্রিক বাধা। সেই বাধা টপকে গেলেন জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বল। এখন তিনি অনুপ্রেরণার অনন্য বিজ্ঞাপন! শারীরিক নানা সমস্যার কারণে মুখেই তার দুর্বার শক্তি। মুখ দিয়ে কলমের আঁচড়ে উত্তরপত্র লিখে এইচএসসি পরীক্ষা জয়।

রংপুরের মিঠাপুকুরের বালারহাট ইউনিয়নের বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৮ পকেটে পুরে উজ্জ্বল জানান দিয়েছেন, তিনি অদম্য মেধাবী। তার এই কষ্টার্জিত ফলে আনন্দের ফল্গুধারা বইছে অভিভাবক, শিক্ষক আর এলাকাবাসী মহলে।

উজ্জ্বলের বাবা জাহিদ সারোয়ার বলেন, ‘এসএসসি পাস করার পর উজ্জ্বলকে বালারহাট কলেজে ভর্তি করি। করোনার কারণে অটো পাস দেওয়ার খবরে তার মন খারাপ ছিল। তার ইচ্ছা ছিল, যেন পরীক্ষা দিয়ে সে এইচএসসি বাধা টপকাবে। পরে সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে সে হয়েছিল দারুণ খুশি। বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অটোরিকশায় শুয়ে সে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া-আসা করত। কেন্দ্রে বিছানায় শুয়ে সব পরীক্ষা দেয় উজ্জ্বল। সে পরিবারের বোঝা না হয়ে, সরকারি চাকরি করে আত্মনির্ভরশীল হতে চায়।’

উজ্জ্বল বলেন, ‘সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও লেখাপড়ার দিকে মেধাবী উজ্জ্বলের চম্বুক টান। সে যে ফল বয়ে এনেছে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীও তা করতে পারেনি। শুয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বোর্ড থেকে অনুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাই প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে সে জীবনে ভালো কিছু করুক।’

উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হতদরিদ্র চাষি জাহিদ সারোয়ারের তিন সন্তানের দ্বিতীয়জন উজ্জ্বলের জন্মের পর থেকে বহুমাত্রিক শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। নিজ বিছানাকে শ্রেণিকক্ষ বানিয়ে উজ্জ্বল দিনরাত মুখ দিয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বই পড়ে। শুধু তাই নয়, মুখ দিয়ে মোবাইল ফোন চালিয়ে অনলাইনে ক্লাসও করে।

এই বিভাগের আরও খবর